রাজু আহমেদ -কালের সংবাদ : রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে অনুষ্ঠিত ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় কোকোলা ফুড প্রডাক্টস এর বিক্রয় ও প্রদর্শন কেন্দ্রের সামনে যেতেই ময়লা ছেড়া জামা গায়ে আনুমানিক ৮ বছর বয়সী একটি ছেলে একটি বস্তার ওপর বসা দেখেই কৌতুহল হতে শুরু হল! ‘ছেলেটি কি মেলার মাঠে মা-বাবাকে হারিয়ে ২/১ দিনে এমন অবস্থা হয়েছে’ কিন্তু না কোকোলা বোল নুডুলসের একটি খালি বর্জ্য বোল নিতে বস্তা ঘাড়ে নিয়ে দৌড়াতে শুরু করলে মুহূর্তের মধ্যে সকল কৌতুহল ভেঙ্গে যায়। তখন বুঝতে বাকী থাকে না যে শিশুটি আসলে পথশিশু।
আস্তে আস্তে ছেলেটির পিছু নিতে নিতে কোকোলা ফুড প্রডাক্টস এর পিছনে খোলা জায়গায় যেতেই দেখা গেল আরো অনেক পথশিশুই খালি বর্জ্য বোল নেওয়ার জন্য ঘাড়ে বস্তা নিয়ে এদিক সেদিক দৌড়াদৌড়ি করছে।
নুডলস খাওয়ার শেষে ক্রেতারাও অন্য কোথাও বোল গুলো না ফেলে সোজা ওদেও হাতেই তুলে দিচ্ছে।
তখন আস্তে আস্তে কাছে গিয়ে প্রথমে ছেলেটির নাম জানতে চাইলেই বলল, তার নাম অপু। ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার হেমায়েতপুর বাস স্টান্ডের বিপরীতে একটি ইট-বালির গদিতে পাহাড়াদার হিসেবে তার বাবা, মা, বোন ও ৩ ভাই একই সাথে গদি মালিকের একটি ঘরে বিনা ভাড়াতে থাকে তারা। তার বাবা দিনে রিক্সা চালায় এবং মা পাশের একটি গার্মেন্টস এ চাকরি করে। ৪ ভাই বোনের মধ্যে বড় ভাই পূর্বে বাসের হেলপার ছিল। সড়ক দূর্ঘটনায় পা হারানোর পর থেকেই এখন সারা দিন বাড়িতেই থাকে। বড় ভাইয়ের পর বোন।
২ বছর আগে এক গার্মেন্টস কর্মীর সাথে বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু স্বামী তাকে ছেড়ে দেয়ায় সেও এখন বাড়িতেই ফিরে এসেছে। তারপরই অপুর স্থান । সে হেমায়েতপুরে অবস্থিত একটি সরকারি প্রাইমারি বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়াশুনা করে। ফাকে ফাকে ছেড়া কাগজ, বর্জ্য প্লাস্টিক ইত্যাদি সংগ্রহ করে বিক্রি করে সংসার পরিচালনা করতে বাবা-মাকে টাকা দিয়ে থাকে।
অপুর ছোট ভাই একই বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণীতে পড়ে। বয়স কম হওয়ায় ওর ছোট ভাইকে মেলায় আনেনি বলেও জানায় অপু। ৬ জনের সংসারে মাত্র দুইজন আয় করার থাকায় তারপরও ভাই একটা পঙ্গু হওয়ায় কখনোই খাল খাবার পায় না তার পরিবারের সদস্যরা।
ভাল খাবার পাওয়ার জন্য অনেক টাকার দরকার বাবার মুখে এমন কথা শুনে অতিরিক্ত আয় করতেই অপু বাণিজ্য মেলায় বর্জ্য প্লাস্টিক কুড়িয়ে মহাজনদের কাছে বিক্রি করে প্রতিদিন ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা আয় করে তার বাবার হাতে তুলে দিলে ঐ টাকা তুলে দিলে অপুর বাবা বাজার থেকে ভাল বাজার করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে ভালভাবে খেতে পারে। সেজন্যই হয়ত অপুর এই চাওয়া’ ‘‘সারা বছর মেলা হওনই ভালা, প্যাট ভইরা খাওন যায়’’।
এসএম/কেএস
Leave a Reply