সাদি মোহাম্মদ, আমেরিকা: রাজবাড়ী তথা পাংশা বালিয়াকান্দি কালুখালি ও গোয়ালন্দের রাজনীতিতে জনাব জিল্লুল হাকিম একজন অতিপরিচিত নাম। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সম্মানিত সভাপতি এবং আওয়মী লীগ থেকে একাদশ জাতীয় সংসদে নির্বাচিত সংসদ সদস্য। জনাব জিল্লুল হাকিমের রয়েছে এক বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক কেরিয়ার। তিনি যখন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজবাড়ী-২ আসনে মনোনয়ন পান তখন তিনি পাংশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সংগ্রামী সভাপতি। ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদীয় নির্বাচনে জনাব জিল্লুল হাকিম বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। কিন্তু পরবর্তিতে ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেও উনি নির্বাচনে পরাজয় বরণ করেন।
এখানে উল্লেখ্য যে সেবারের নির্বাচনে জনাব জিল্লুল হাকিমের সঙ্গে জনাব মন্জুর মোর্শেদ সাচ্ছুও আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন প্রার্থনা করেন এবং নমিনেশনের ক্ষেত্রে জিল্লুল হাকিমের সঙ্গে বেশ প্রতিযোগীতা করেন। যদিও শেষ পর্যন্ত জিল্লুল হাকিমই নমিনেশন লাভ করেন। কিন্তু দলের একজন যোগ্য নেতা হিসেবে শুধুমাত্র নমিনেশন চাওয়ার কারণে মন্জুর মোর্শেদ সাচ্ছু জিল্লুল হাকিমের বিরাগভাজন হন। অথচো ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ইন্জিয়ার নাসির উদ্দিনের পরিবর্তে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে জিল্লুল হাকিম যে নমিনেশন লাভ করেন তার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান ছিল মন্জুর মোর্শেদ সাচ্ছুর। কিন্তু পরবর্তিতে শুধু মাত্র দলীয় মনোনয়ন চাওয়ায় জনাব সাচ্ছু জিল্লুল হাকিমের বিরাগভাজন হন। উল্লেখ্য মন্জুর মোর্শেদ সাচ্ছুর সহযোগিতায় জনাব জিল্লুল হাকিম আরও অনেককে অতিক্রম করে পাংশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদও লাভ করে ছিলেন।
পরবর্তীতে ২০০৬ সালের বাতিল হওয়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনাব জিল্লুল হাকিম খুব সহজেই পুনরায় আওয়ামী লীগের নমিনেশন লাভ করেন। কিন্তু নির্বাচন বাতিল হওয়ার কারণে আরও অনেকের সঙ্গে উনারও সেবার নির্বাচন করা হয় না। এর পর ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনাব জিল্লুল হাকিম পুনরায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন লাভ করে নির্বাচনে জয় লাভ করেন । কিন্তু এবার আবার এডঃ রকিবুল হক রিপন উনার সঙ্গে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে প্রতিযোগীতা করলে উনি নতুন করে জনাব জিল্লুল হাকিমের বিরাগভাজন হন। অথচো ২০০৬ সালের বাতিল হওয়া নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন পেলে সর্বপ্রথম এডঃ রিপন জনাব জিল্লুল হাকিমকে তার বাসায় গিয়ে শুভেচ্ছা জানান এবং নমিনেশন পেয়ে ঢাকা থেকে এলাকায় যাওয়ার সময় তিনি জনাব জিল্লুল হাকিমের সঙ্গি হন।
এরপরে ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনাব জিল্লুল হাকিম পুনরায় খুব সহজে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে বিনা নির্বাচনে জয় লাভ করেন। তারপর ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে জনাব জিল্লুল হাকিম মনোনয়ন পেলেও নমিনেশন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বিগত সময়ের থেকে সবচেয়ে বেশি বেগ পেতে হয় তাকে। মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে এবার পান কি না পান অবস্থার সম্মুখিন হতে হয় জিল্লুল হাকিমকে। আর এবার উনার মনোনয়ন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়ান আওয়ামী সমর্থীত চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসা পরিষদের সভাপতি ডাঃ ইকবাল আর্সেনাল। কিন্তু সব বাঁধা অতিক্রম করে জনাব জিল্লুল হাকিম প্রতিবারের মতো এবারও শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ল লাভ করেন। কিন্তু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া মানেই অতি সহজে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া এই দাম্ভিকতায় জনাব জিল্লুল হাকিম এবার একেবারেই বদলে যান। নমিনেশন প্রাপ্তির সময় নিজ দলের যারা যারা উনার বিরোধীতা করেছিলেন তিনি তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করেন। তাদেরকে কানটাটু হিসেবে টিচ করেন। এবং খুব সহজে নির্বাচনে জয় লাভের পর এবার আর প্রতিবারের মতো শুধু একজন নয় ডাঃ ইকবাল আর্সেনাল সহ রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতা কর্মী জিল্লুল হাকিমের বিরাগভাজন হন।
উল্লেখ্য যে প্রতিটি নির্বাচনের আগে দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তির সময় যে ব্যক্তিই জনাব জিল্লুল হাকিমের সঙ্গে দলিয় মনোনয়ন চেয়েছেন সেই ব্যক্তিই পরবর্তিতে উনার বিরাগভাজন হয়েছেন। উনি তাকে বা তাদেরকে নিজের শত্রু ভেবেছেন। কিন্তু দলীয় মনোনয়নের জন্য নমিনেশন চাওয়াতো রাজনীতিরই অংশ। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগতো আর একদল এক নেতার সংগঠন নয়। এখানে অনেক যোগ্য নেতার সমাবেশ। এক সঙ্গে অনেকেই নমিনেশন চাইবে এটাইতো স্বাভাবিক। আওয়ামী লীগের বাইরে থেকে তো আর কেউ নমিনেশন চাইতে আসে না। সবাই নিজ দলের লোক। আপনি যোগ্য হলে শেষ পর্যন্ত আপনে নমিনেশন পাবেন এটাইতো নিয়ম। এখানে তো কাউকে নিজের শত্রু বা বিরোধী ভাবার কিছু নাই। দলে সুস্থ প্রতিযোগীতা থাকবে। যোগ্যতার বিচারে নেতা নির্বাচিত হবে এই চর্চা আমাদেরকে করতে হবে। ভালো রাজনীতির জন্য এটা খুবই প্রয়োজন এবং দরকারি।
রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতির ক্ষেত্রে একটা কথা কিছুদিন আগেও প্রচলিত ছিল যে শেষ পর্যন্ত জিল্লুল হাকিমই সব। অবশ্য রাজবাড়ী-২ আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে বার বার নমিনেশন প্রাপ্তিতে এটা প্রমাণও করে যে তার থেকে বেশি যোগ্যতা সম্পূর্ণ কোন নেতা নাইও। কিছু দিন আগেও রাজবাড়ী পাংশার জনগণের মুখ থেকে শুনা যেত যে বর্তমান সময়ে আওয়ামী লীগে এখনও পর্যন্ত জিল্লুল হাকিমের থেকে বড় কোন নেতা রাজবাড়ীতে তৈরি হয় নাই। কিন্তু এখন বুঝি দিন পালটিয়ে গেছে। প্রবল প্রতিপত্তি আর প্রভাবশালী নেতা জনাব জিল্লুল হাকিমের দিনকাল আর আগের মতো নাই। সময় যেন এখন অনেকটাই উনার বিপরীত। আর এই সময় বিপরীত এবং আগের মতো দিন কাল না থাকার কারণ উনি নিজেই। যার কিছুটা বর্ণনা নিচে দিতে চেষ্টা করবো।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর জনাব জিল্লুল হাকিম এর রাজনীতির সঙ্গে যে নামটি সবচেয়ে বেশি জড়িয়ে যায় সেটি হলো আশিকুর রহমান মিতুল হাকিম। উল্লেখ্য মিতুল হাকিম জনাব জিল্লুল হাকিমের বড় পুত্র। যার পরিচয়ের ক্ষেত্রে সবসময় বলা হয়ে থাকে তিনি রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের অন্যতম সদস্য। প্রতিটা সংগঠনে এক নাম্বার সদস্য দ্বিতীয় তৃতীয় সদস্য থাকে কিন্তু অন্যতম সদস্য থাকে কিনা সেটা আমার জানা নাই। কিন্তু মিতুল হাকিম রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের অন্যতম সদস্য ! একসময় ছিল ছাত্রলীগ যুবলীগ কিম্বা অন্য কোন লীগ বা আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন থেকে নেতা কর্মীরা আওয়ামী লীগের পদ পেতেন বা সদস্য হতেন কিন্তু এখন ক্ষমতা থাকলে সরাসরি আওয়ামী লীগের নেতা বা সদস্য হওয়া যায়। শুধু তাই নয় অন্যতম সদস্যও হওয়া যায়। যেমনটি হয়েছেন মিতুল হাকিম। মিতুল হাকিম এমপি পুত্র হয়ে জেলা আওয়ামী লীগের অন্যতম সদস্যের নাম ভাঙ্গিয়ে রাজবাড়ী বিশেষ করে পাংশাতে মাত্র কয়েক দিন আগেও আওয়ামী লীগের অঘোষিত প্রধান ছিলেন। দলীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে মিতুল হাকিমই ছিলেন সর্বেসর্বা। মিতুল হাকিমই ঠিক করতেন উপজেলা আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন পর্যায়ে দলের অন্যান্য সহযোগী সংগঠনে কে কোন পদ পাবেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি সাধারণ সম্পাদক মিতুল কর্তৃক নির্ধারিত। মিতুলের দাপটে উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলনে কেউ নিজ থেকে প্রার্থী হওয়ারই সাহস করেননি।
এছাড়া কে উপজেলা নির্বাচনে দলের বাইরে বিদ্রোহী প্রার্থী হবেন সেটিও মিতুল ঠিক করে দিয়েছে। গত উপজেলা নির্বাচনে রাজবাড়ী তথা গোয়ালন্দ পাংশা বালিয়াকান্দি কালুখালিতে আওয়ামী লীগের যেসমস্ত বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে জয় লাভ করেছেন তারা মিতুল হাকিম কর্তৃক নির্ধারিত প্রার্থী ছিলেন। এবং মিতুলের বিশেষ আনুকুল্য থাকায় তারা সহজে জয়লাভও করতে পেরেছিলেন। তার জন্য অবশ্য ঐ প্রার্থীদেরকে অনেক অনেক টাকা দিয়ে মিতুলকে ম্যানেজ করতে হয়েছিল। যা দলমত নির্বিশেষে রাজবাড়ীর প্রায় সবারই জানা। কথিত আছে পাংশা আওয়ামী লীগের সর্বকাজে জিল্লুল হাকিম নন মিতুল হাকিমের হুকুম নির্দেশই সব। এ যেন বাঁশের থেকে কুঞ্চি বেশি শক্ত অবস্থা। মিতুল হাকিম পাংশা বালিয়াকান্দি কালুখালিতে বিশেষ করে পাংশাতে আওয়ামী রাজনীতির সর্বক্ষেত্রে একটা বিশেষ বলয় তৈরি করেছিলেন। যেখানে সব দল বেদলের জুনিয়রদের একচ্ছত্র প্রাধান্য ছিল। যাদের অনেকের নামে সন্ত্রাসী চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন রকম অন্যায় অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। মিতুল হাকিমের সৈনিক বা ছেলেপুলেদের দাপটে বহু বছর ধরে রাজনীতি করে আসা অনেক সিনিয়র নেতাদের আওয়ামী রাজনীতি করাই দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছিল। কেউ কেউ তো রাজনৈতিক দেউলিয়াপনায় কিম্বা বাধ্য হয়ে মিতুল হাকিমের বড় বড় ছবির নিচে নিজেকে কোনরকম দেখা যায় এরকম ছবি প্রিন্ট করে বেনার পোস্টার ফেষ্টুন টানিয়েছিলেনও। আর মিতুলের সব কাজে পিতা হিসেবে জনাব জিল্লুল হাকিমের সায় বা সহযোগীতা ছিল। আমার ধারণা ছেলেকে বড় নেতা বানাতেই উনি বুঝেশুনে এমনটি করেছেন। এমন কথাও আছে যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজবাড়ী-২ আসনে জিল্লুল হাকিম নন মিতুল হাকিম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয় চাইবে। হয়তোবা সেই প্লান প্রোগ্রামেই বাপ বেটা এগোচ্ছিলেন। কিন্তু আমার ব্যক্তিগত মতামত প্রক্রিয়াটা সঠিক ছিল না। রাজবাড়ীর জনগণ যতক্ষণ পর্যন্ত জনাব জিল্লুল হাকিমকে নেতা হিসেবে মেনে চলছিলেন ততক্ষণ পর্যন্ত ছেলেকে দিয়ে উনার সমস্ত রাজনীতি করানোর নীতি ঠিক ছিল না। রাজবাড়ীর অনেক আওয়ামী লীগারদের কাছে এখনো পর্যন্ত জনাব জিল্লুল হাকিমই বড় নেতা। কিন্তু উনি নিজ থেকেই ছেলেকে নেতা বানাতে গিয়ে নিজেকে পেছনে ঠেলে দিয়েছেন। নিজের নের্তৃত্বকে ছোট করেছেন। যে সমস্ত ত্যাগী নেতা কর্মীরা বিশেষ করে যারা মিতুলের সিনিয়র, যারা কখনই মিতুলের সঙ্গে রাজনীতি করেন নাই তারা নেতা হিসেবে জিল্লুল হাকিমকে মানলেও এবং সম্মান করলেও তারা যে জিল্লুল হাকিম বেঁচে থাকা অবস্থায় মিতুলের মতো একজন জুনিয়রকে নেতা হিসেবে খুব সহজে নিতে পারবে না কিম্বা মেনে নেব না এটা জনাব জিল্লুল হাকিম বুঝতে পারেন নাই।
এই আমার কাছেইতো জিল্লুভাই নন মিতুলভাই নেতা ব্যাপারটা একেবারেই সহজ নয়। কারণ আমার/আমাদের সময়ে কখনো কোথায়ও তো মিতুলকে রাজবাড়ী তথা পাংশায় রাজনীতি করতে দেখি নাই। আর তাই রাজবাড়ী আওয়ামী লীগের অনেকের নেতা এখনো জিল্লুল হাকিম। কথিত অন্যতম সদস্য মিতুল হাকিম নয়। রাজবাড়ীর রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি জিল্লুল হাকিম এখনো অনেক গুরত্বপূর্ণ নেতা। রাজবাড়ীর আওয়ামী রাজনীতিতে জিল্লুল হাকিমের গুরত্ব এবং অবদান কোন ভাবেই কম নয়। কিন্তু জিল্লুল হাকিম রাজনীতিতে নিজ ছেলেকে প্রতিষ্ঠিত করার প্রয়াশে নিজ দলের অন্য অনেকের গুরত্ব কম দিতে গিয়ে নিজেই নিজের গুরত্ব কমিয়ে ফেলেছেন। হয়ে পড়েছেন ত্যাগী নেতা কর্মীদের থেকে বিচ্ছিন্ন।
দুঃখজনক হলেও সত্য যে আজ থেকে ১০/১৫ বছর আগের জিল্লুল হাকিম আর আজকের জিল্লুল হাকিম কোন ভাবেই একরকম নন। উনি অনেক বদলে গেছেন। উনি পক্ষ বিপক্ষ আর দল উপদলের গ্যারাকলে এবং ছেলেকে নেতা বানাতে গিয়ে আজ নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে (সাম্প্রতিক পৌরসভার নির্বাচনতো তাই বলে) চলে গেছেন। উনি উনার রাজনৈতিক ভুলে আজ অনেকটাই রাজবাড়ীর রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন বা দূরে। আওয়ামী লীগে উনার রাজনৈতিক অবস্থান আর কোন ভাবেই আগের মতো নাই। আমার ধারণা বিএনপি জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকার সময়ও জনাব জিল্লুল হাকিমের আজকের মতো এতোটা খারাপ অবস্থা ছিল না। এবং এই অবস্থার জন্য উনার ছেলে আর উনি নিজেই দায়ী।
আমার ভাবতে অবাক লাগে যে দল ক্ষমতায় থাকা কালিন সময়ে এবং নিজে এমপি থেকেও উনি বর্তমানে কেন্দ্রে ও স্থানীয় পর্যায়ের রাজনীতিতে অনেক বেশি কোনঠাসা অবস্থার মধ্যে আছেন। সত্যি বলতে কি আজকের অবস্থা কোন ভাবেই জিল্লুল হাকিমের সঙ্গে যায় না। কিন্তু কেন আজ উনার এই অবস্থা তা উনি যতো তাড়াতাড়ি উপলদ্ধি করতে পারবেন ততো তাড়াতাড়ি উনি উনার পূর্বের রাজনীতিতে উত্তোরণ করতে পারবেন বলে আমি মনে করি। সমস্ত ভুলগুলোকে সুধরে উনাকে আবার জনগণের কাতারে ফিরে আসতে হবে। আমার ধারণা সাধারণ কর্মী নেতাদের কাছে জিল্লুল হাকিম এখনও বেশ জনপ্রিয়। জিল্লুল হাকিমকে বুঝতে হবে যে তৃনমূলের নেতা কর্মীরা মিতুল নয় জিল্লুল হাকিমকে নেতা মানে এবং ভালোও বাসে। তাদের অনেকের কাছেই অনেক কিছুতে বিতর্কিত মিতুল রাজনীতির এক জুনিয়র পোলা। জিল্লুল হাকিমকে ছাড়া মিতুল সামনে থাকলে অনেক সিনিয়রা সেখানে থাকতে স্বস্তি বোধ করেন না। কারণ মিতুল ভাই নন জিল্লু ভাই এখনো তাদের নেতা।
উপরের লেখাগুলো পড়ে হয়তোবা মনে হতে পারে যে আমি জিল্লুল হাকিম বিশেষ করে মিতুল হাকিমের বিরোধী কেউ। না তা মটেই নই। দেশে থাকা কালীন সময়ে আমি অনেক দিন জনাব জিল্লুল হাকিমের নের্তৃত্বে আওয়ামী রাজনীতি করেছি। নেতা হিসেবে জিল্লুল হাকিম অবশ্যই আমার সম্মানের পাত্র। একজন আওয়ামী লীগার হিসেবে জিল্লুল হাকিমতো বটেই পৃথিবীর সমস্ত সৎ এবং ত্যাগী নেতা কর্মী আমার সম্মানের এবং ভালোবাসার পাত্র। যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক যারা প্রকৃত আওয়ামী লীগার আমি তাদেরকে কুর্নিশ করি।
আরও অনেকের মতো জিল্লুল হাকিম এখনো আমার শ্রদ্ধার পাত্র। জিল্লুল হাকিম এখনও রাজবাড়ীর রাজনীতিতে একটা ফ্যাক্টর। আমি/আমরা এখনও সেই ৯০ দশকের জিল্লুল হাকিমকে দেখতে চাই। যার কাছে সমস্ত নেতা কর্মী এক। কেউই তার বাইরের কেউ নন। কিন্তু আমার কেন জানি মনে হয় জিল্লু ভাই আর আগের মতো হতে পারবেন না। জিল্লু ভাই কিছুতেই নিজ ভুল স্বীকার করে ছেলে মিতুলকে পাশ কাটিয়ে সামনে আসতে পারবেন না। ফলে আজ যারা রাজবাড়ীর আওয়ামী রাজনীতিতে জিল্লু ভাইয়ের থেকে অনেক বেশি সক্রিয়। যারা পৌর নির্বাচনকে সামনে রেখে নৈাকার পক্ষে নির্বাচনের মাঠে থেকে সাধারণ নেতা কর্মীদের কাতারে সবসময় আছেন। তারা জিল্লু ভাইকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাবে এটাইতো স্বাভাবিক। এবং এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে রাজবাড়ী-২ আসনে অন্য কারোর নৌকার টিকিট পাওয়া কোন ভাবেই অমূলক নয়।
রাজনীতিতে প্রতিযোগীতা থাকবে এটাইতো স্বাভাবিক। কিন্তু আমার সঙ্গে নমিনেশন চাইলে সে আমার শত্রু। আমার ভুল ধরিয়ে দিলে সে আমার বিরোধী। না তা কিছুতেই না। সবশেষে আমরা সবাই আওয়ামী লীগার। আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের নেতা। সব ভেধাভেদ ভুলে রাজবাড়ী আওয়মী লীগেরর সমস্ত নেতা কর্মীরা এক কাতারে মিলিত হবেন এই প্রত্যাশা রইলো।
মনে রাখবেন আপনে সব থেকে বেশি যোগ্য এবং জনপ্রিয় হলে আপনিই নমিনেশন পাবেন। আপনিই সভাপতি সাধারণ সম্পাদক হবেন। নেতা নেতৃত্ব কোন পৈত্রিক সম্পদ নয় যে আপনার পরে আপনার ছেলেই নেতা হবেন। যোগ্যতা বলে যার যেখানে যাওয়ার কথা তাকে সেখানে যেতে দিন এবং সেটা মেনে নিন মেনে চলুন। যোগ্যরাই আগামী দিনে রাজবাড়ী তথা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতা হবেন, নমিনেশন পাবেন, চেয়ারম্যান মেয়র এমপি মন্ত্রী হবেন সবশেষে এই প্রত্যাশা রইলো।
আমরা সৎ শিক্ষিত যোগ্য এবং ত্যাগী নেতা চাই। অসৎ এবং বিতর্কিতদের রাজবাড়ী তথা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ঠাই নাই।
এস ইসলাম/
Leave a Reply