সাদী মোহাম্মদ, আমেরিকা: বঙ্গবন্ধু’র বাংলার গ্রন্থ প্রকাশক তৈরীর কারীগড় কাজী আনোয়ার হোসেন ১৯৩৬ সালের ১৯ জুলাই ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পুরো নাম কাজী শামসুদ্দিন আনোয়ার হোসেন। ডাক নাম ‘নবাব’। তার পিতা প্রখ্যাত বিজ্ঞানী, গণিতবিদ ও সাহিত্যিক কাজী মোতাহার হোসেন, মাতা সাজেদা খাতুন। তারা ছিলেন ৪ ভাই ও ৭ বোন ।
কাজী আনোয়ার হোসেনের পৈতৃক নিবাস রাজবাড়ী জেলার অন্তর্গত পাংশা উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের বাগমারা গ্রামে। তিনি ১৯৫২ সালে সেন্ট গ্রেগরি স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর জগন্নাথ কলেজ থেকে আইএ ও বিএ পাস করেন। ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে এমএ পাস করেন। পড়াশুনা শেষ হওয়ার পর রেডিওতে তিনি নিয়মিত গান গাইতে শুরু করেন। নিয়মমাফিক কোনো প্রশিক্ষণ না নিলেও বাড়িতে গানের চর্চা সবসময় ছিলো। তার তিন বোন সানজীদা খাতুন, ফাহমিদা খাতুন ও মাহমুদা খাতুন এরা প্রত্যেকেই বিখ্যাত রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী।
তিনি ১৯৫৮ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত ঢাকা বেতারের সঙ্গীত শিল্পী ছিলেন। ১৯৬২ সালে কণ্ঠশিল্পী ফরিদা ইয়াসমিনকে (সাবিনা ইয়াসমিনের বোন) বিয়ে করেন। কিন্তু রেডিও কিংবা টিভিতে গান গাওয়া এবং সিনেমার প্লে-ব্যাক কাজী আনোয়ার হোসেন ছেড়ে দেন ১৯৬৭ সালে। ১৯৬৩ সালের মে মাসে বাবার দেয়া দশ হাজার টাকা নিয়ে সেগুনবাগিচায় প্রেসের যাত্রা শুরু করেন। আট হাজার টাকা দিয়ে কেনেন একটি ট্রেডল মেশিন আর বাকিটাকা দিয়ে টাইপপত্র। দুজন কর্মচারী নিয়ে সেগুনবাগান প্রেসের শুরু, যা পরবর্তীকালে নাম পাল্টে হয় সেবা প্রকাশনী। পরবর্তীতে তার প্রকাশনা সংস্থা বাংলাদেশে পেপারব্যাক গ্রন্থ প্রকাশ, বিশ্ব সাহিত্যের প্রখ্যাত উপন্যাসের অনুবাদ এবং কিশোর সাহিত্যের ধারাকে অগ্রসর করার কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৬৪ সালের জুন মাসে প্রকাশিত হয় কুয়াশা-১, যার মাধ্যমে সেগুনবাগান প্রকাশনীর আত্মপ্রকাশ ঘটে।
কাজী আনোয়ার হোসেনের এক মেয়ে ও দুই ছেলে রয়েছে। তার মেয়ে শাহরীন সোনিয়া একজন কন্ঠশিল্পী। বড় ছেলে কাজী শাহনূর হোসেন এবং ছোট ছেলে মায়মুর হোসেন লেখালেখির এবং সেবা প্রকাশনীর সাথে জড়িত। কাজী আনোয়ার হোসেনের অধিকাংশ উপন্যাস ও গল্প বিদেশী কাহিনীর ছায়া অবলম্বনে রচিত। কুয়াশা সিরিজের কুয়াশা-১-এর মাধ্যমে লেখালেখির জগতে বিচরণ ঘটে তার। কাজী আনোয়ার হোসেন ছদ্মনাম হিসেবে বিদ্যুৎ মিত্র ও শামসুদ্দীন নওয়াব নাম ব্যবহার করতেন। মাসুদ রানা তার সৃষ্টি করা একটি কাল্পনিক চরিত্র। ১৯৬৬ সালে ধ্বংস পাহাড় প্রচ্ছদ নামের প্রথম গ্রন্থটি থেকে শুরু করে সেবা প্রকাশনী হতে মাসুদ রানা সিরিজে এই চরিত্রকে নিয়ে চার শতাধিক গুপ্তচর কাহিনীর বই প্রকাশিত হয়েছে।
সিরিজের প্রথম দুইটি বই “ধ্বংস পাহাড়”, “ভারতনাট্যম” এবং “হ্যাকার” ছাড়া বাকিগুলো ইংরেজি ও অন্যান্য ভাষার বইয়ের ভাবানুবাদ বা ছায়া অবলম্বনে রচিত। মাসুদ রানার চরিত্রটিকে মূলত ইয়ান ফ্লেমিংয়ের সৃষ্ট জেমস বন্ড চরিত্রটির বাঙালি সংস্করণ হিসেবে গণ্য করা হয়। কাজী আনোয়ার হোসেন এছাড়া রহস্যপত্রিকা নামক মাসিক পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭৪ সালে মাসুদ রানা’র কাহিনী নিয়ে বাংলাদেশে চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয় (মূল ভুমিকায় ছিলেন সোহেল রানা) বাংলাদেশের টিভি নাটকের ইতিহাসে প্রথম প্যাকেজ নাটক প্রাচীর পেরিয়ে ‘র কাহিনী রচনা করা হয় কাজী আনোয়ার হোসেন রচিত মাসুদ রানা সিরিজের পিশাচ দ্বীপ নামক বই থেকে।
এছাড়া নতুন করে মাসুদ রানা’র কাহিনী অবলম্বনে ‘মাসুদ রানা’ চলচ্চিত্র নির্মানাধীন রয়েছে। ১৯৭৪ সালে শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার ও সংলাপ রচয়িতা হিসেবে বাচসাস পুরস্কার লাভ করেন তিনি। এছাড়া পেয়েছেন সিনেমা পত্রিকা ও জহির রায়হান চলচ্চিত্র পুরস্কার। বাংলা সাহিত্যের তুমুল জনপ্রিয় থ্রিলার সিরিজ ‘মাসুদ রানা’র স্রষ্টা এবং সেবা প্রকাশনীর প্রকাশক কাজী আনোয়ার হোসেন ১৯ জানুয়ারি ২০২২ বুধবার বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া।
Leave a Reply