কালের সংবাদ ডেস্ক: বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কন্ট্রোল কমিশনের সদস্য ও ডাকসুর সাবেক জিএস বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরেড মোর্শেদ রাষ্ট্রীয় সম্মান (গার্ড অব অনার) প্রদান করা হয়েছে। এরপর তাঁর মরদেহ গ্রামের বাড়ি পাবনা জেলার ঈশ্বরদীতে পাঠানো হয়েছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মোর্শেদ আলী গত ২৬ মার্চ সকালে ব্রেইন স্ট্রোক করে বারডেম হাসপাতালের এইচডিইউতে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। আজ বুধবার ভোরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তাঁর মরদেহ প্রথমে রাজধানীর পুরানা পল্টনস্থ সিপিবি অফিস চত্ত্বরে নেওয়া হয়। সেখানে প্রথমেই সিপিবির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ কাস্তে-হাতুড়ি খচিত কমিউনিস্ট পার্টির লাল পতাকা দিয়ে প্রয়াত কমরেডের মরদেহ আচ্ছাদিত করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এরপর সিপিবি, বাম গণতান্ত্রিক জোট, বাসদ, বাসদ (মার্কসবাদী), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, টিইউসি, কৃষক সমিতি, ক্ষেতমজুর সমিতি, যুব ইউনিয়ন, ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, উদীচী, খেলাঘর, গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি, সাপ্তাহিক একতা, মুক্তিযুদ্ধে ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়ন গেরিলা বাহিনী, মণি সিংহ-ফরহাদ ট্রাস্টসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠনের নেতৃবৃন্দ শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল্লাহ ক্বাফী রতনের সঞ্চালনায় শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানে সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, গণমানুষের মুক্তির জন্য আজীবন লড়াই করেছেন কমরেড মোর্শেদ আলী। এ দেশের কমিউনিস্ট ও প্রগতিশীল আন্দোলনে তাঁর অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাঁর স্বপ্নের সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লড়াইকে অগ্রসর করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তিনি।
পরে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য মোর্শেদ আলীর মরদেহ নেওয়া হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয় এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে। তারপর মিরপুরস্থ বাসা হয়ে গ্রামের বাড়ি পাবনার ঈশ্বরদী পাঠানো হয়। সেখানে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
এদিকে বাম গণতান্ত্রিক জোট কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সমন্বয়ক বজলুর রশীদ ফিরোজসহ জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের নেতৃবৃন্দ এক যুক্ত বিবৃতিতে কমরেড মোর্শেদ আলীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে তাঁর শোক সন্তপ্ত পরিবার ও রাজনৈতিক সহযোদ্ধাদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। নেতৃবৃন্দ বলেছেন, ছাত্র জীবন থেকেই মোর্শেদ আলী শোষণমুক্ত সমাজের স্বপ্ন দেখতেন এবং তা বাস্তবায়নের সংগ্রামে নিজেকে উৎসর্গ করেন। পুঁজিবাদী ভোগবাদী সমাজ মানসিকতার নানা হাতছানি তাঁকে পথভ্রষ্ট করতে পারেনি। তাঁর মৃত্যুতে দেশের শ্রমজীবী মানুষ এক অকৃত্রিম বন্ধুকে হারালো এবং বামপন্থি আন্দোলনেরও অপূরণীয় ক্ষতি হলো। নেতৃবৃন্দ কমরেড মোর্শেদ আলীর আজীবনের লালিত শোষণমুক্ত সাম্য সমাজ নির্মাণের স্বপ্ন বাস্তবায়নের সংগ্রাম এগিয়ে নেওয়ার জন্য সকল বাম প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা মহানগরে কমিউনিস্ট পার্টির মুখ্য নেতা হিসেবে পার্টি ও গণসংগঠন বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-ছাত্রী সংসদ (ডাকসু)’র ১৯৬৬-৬৭ মেয়াদে সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র (টিইউসি)’র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও বাংলাদেশ কৃষক সমিতির সাবেক সভাপতি ছিলেন। কমরেড মোর্শেদ আলী কৈশরেই ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে কমিউনিস্ট রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। তার সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি ’৬৬ সালের ৬ দফা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, এরশাদ স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, শ্রমিক ও কৃষক আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন ও তা সংগঠিত করেছেন। শ্রমিক ও কৃষক আন্দোলনে তার ভূমিকা অগ্রগণ্য।
এস ইসলাম/
Leave a Reply